ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ হানিফ এঁর ষষ্ঠদশ (১৬তম) মৃত্যুবার্ষিকী আগামী সোমবার (২৮শে নভেম্বর)। তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের পৃথক বাণী দিয়েছেন।.
মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সোমবার (২৮শে নভেম্বর) সকাল ১০:৩০ মিনিটে আজিমপুর কবরস্থানে কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন ও আজিমপুরস্থ মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে। আওয়ামী লীগ ও তাঁর সহযোগী সংগঠনসহ সকল স্থরের মানুষ এ শ্রদ্ধা নিবেদন ও দোয়া মাহফিলে অংশ নিবেন। কর্মসূচীতে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য ও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচিত মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন সহ আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত থাকবেন।.
১৯৪৪ সালে ১লা এপ্রিল পুরান ঢাকার আবদুল আজিজ ও মুন্নি বেগম দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন মোহাম্মদ হানিফ। ছাত্রাবস্থায় ছাত্রলীগের সক্রিয় কর্মী হিসেবে রাজনীতি শুরু করেন। ১৯৬৫ সালে বঙ্গবন্ধুর একান্ত সচিবের দায়িত্ব পেয়ে এসময় ছয়দফা মুক্তি সনদ প্রণয়ন ও প্রচারে বিশেষ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৬৭ সালে তাঁর বহুমুখী প্রতিভায় মুগ্ধ প্রিয়কন্যা ফাতেমা খাতুনকে মোহাম্মদ হানিফের সঙ্গে বিয়ে দেন ঢাকার শেষ সরদার আলহাজ্ব মাজেদ সরদার। তিনি এক ছেলে ও দুই কন্যাসন্তান রেখে গেছেন। ছেলে মোহাম্মদ সাঈদ খোকন ঢাকা দক্ষিণের প্রথম নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।.
পরবর্তীতে ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান ও মহান মুক্তিযুদ্ধে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন মোহাম্মদ হানিফ। ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর ছেড়ে দেওয়া ঢাকা-১২ আসন থেকে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে হুইপের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৬ সালে তিনি ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে মৃত্যুুর আগ পর্যন্ত তিনি এই দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৯৪ সালে ৩০ জানুয়ারি ঢাকা সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন মোহাম্মদ হানিফ। ১৯৯৬ এর মার্চে স্বৈরাচার বিরোধী গণআন্দোলনে তারই নেতৃত্বে 'জনতার মঞ্চ' তৈরী করে তৎকালীন বিএনপি সরকারের পতন ঘটান এবং জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনে ভুমিকা রেখেছেন। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউতে গ্রেনেড হামলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গিয়ে মারাত্মক আহত হন। ২০০৬ সালের ৮ফেব্রæয়ারি মুক্তাঙ্গনে এক সমাবেশে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৮ নভেম্বর ৬২ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।.
মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ষষ্ঠদশ (১৬তম) মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁর কর্মময় জীবনকে স্বরণ করে প্রদত্ত বাণীতে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, মোহাম্মদ হানিফ ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন পরীক্ষিত নেতা। তার সততা, আন্তরিকতা, নিষ্ঠা ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের গুণে রাজনৈতিক জীবনের প্রতিটি পদে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সফল একজন মানুষ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অবিচল থেকে আওয়ামী লীগের একজন সংগ্রামী নেতা হিসেবে আমৃত্যু জনগণের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। তিনি ছিলেন দুঃখী মানুষের আপনজন। ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা হলে তিনি মানবঢাল রচনা করে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে রক্ষার প্রাণান্তর প্রচেষ্টা চালান। এতে তিনি মারাত্মকভাবে আহত হন। নিজের জীবন বাজি রেখে প্রিয় নেত্রীকে বাঁচাতে আত্মত্যাগের এ উদাহরণ সকল রাজনৈতিক নেতা-কর্মীর জন্য সবসময় অনুকরণীয় হয়ে থাকবে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর বাণী বলেন, মোহাম্মদ হানিফ বাঙালির মুক্তির সনদ ৬-দফা ঘোষণার সময় থেকে তিনি জাতির পিতার একান্ত সহকারি হিসেবে অত্যন্ত একাগ্রতা ও বিশ্বস্ততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মহান মুক্তিযুদ্ধসহ স্বৈরাচারবিরোধী গণআন্দোলন ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে এই জননেতা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। আওয়ামী লীগ তথা বাংলাদেশের একজন নিবেদিতপ্রাণ, ত্যাগী, পরীক্ষিত এবং দেশপ্রেমিক নেতা হিসেবে মোহাম্মদ হানিফ মানুষের হৃদয়ের গভীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় বেঁচে থাকবেন। মোহাম্মদ হানিফের সংগ্রামী জীবন ও কর্ম নতুন প্রজন্মের রাজনৈতিক কর্মীদের দেশপ্রেম ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত করবে করবে।.
ডে-নাইট-নিউজ /
আপনার মতামত লিখুন: